হাওয়া বদল
– সৃজিতা ধর
ভেদনীতিতে আস্থাবান ব্যক্তি বা বৈষম্যমূলক আচরণকারীর অভাব খুব একটা চোখে পড়ে না এই তথাকথিত ‘শিক্ষিত’ সমাজে। পুরুষতান্ত্রিকতা গ্রাস করেছে নৈতিকতাকে। মেয়েরা অনেক ক্ষেত্রে এগিয়ে গেলেও কিছু কিছু মেয়েদের পরিস্থিতি আমাদের গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র অনামিকা-র মতও হয়।
বছর পঁচিশের অনামিকা-র চোখে অনেক স্বপ্ন। না, ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখার কথা বলছি না। অনামিকা ঘুমের ঘোরে দেখা অবাস্তব স্বপ্ন নিয়ে বাঁচে না। ও খোলা চোখে স্বপ্ন দেখে যে, নিজেকে কাঙ্ক্ষিত উচ্চতায় সে নিয়ে যেতে পেরেছে। প্রথমবার অনু(অনামিকা) বৈষম্যের আঁচ পেয়েছিল ক্লাস ফাইভে। তখন অনু নাচ শিখতে যেত এক জায়গায়। ছেলে-মেয়ে একসাথে নাচ শিখলেও সেদিন নাচের রমা দিদিমণি মেয়েদের উদ্দেশ্য করে বলেছিল যে, “তোদের একটু সহজ মুদ্রা শেখাই।” সেদিন অনুর আর বলা হয়ে ওঠেনি যে “ওরা পারলে আমরাও পারবো।”
ক্লাস নাইনে ওঠার পরে নাচটাও বন্ধ করে দেওয়া হয়। ঐ ‘তৃতীয় হাত’-টা হিসেবে বলা হয় যে নাচ করা হয়তো শ্বশুরবাড়ি মেনে নেবে না। তাহলে অত নাচ শিখে আর কি হবে! আসলে মেয়েদের সেই ছড়া শেখানোর বয়স থেকেই শেখানো হয় যে-“…রাঙা মাথায় চিরুনি/বর আসবে এখুনি, নিয়ে যাবে তখনই।” অর্থাৎ ছোট থেকেই বোঝানো হয় যে, কোনো এক ছেলে এসে তাকে নিয়ে যাবে…আর তাহলেই যেন সেটা সার্থক। একটা প্রশ্ন থেকেই যায় তাহলে- বর না আসলে সেই মেয়েটা এগোতেই পারবে না? নাকি বরের আগমনটাই একটা মেয়ের জীবনের চূড়ান্ত সার্থকতা?
অনু-র সম্বন্ধ এসেছে। ছেলের সাথে আলাদা কথা বলার সময় জানতে পারে যে চাকরি করা মেয়ে তাদের খুব একটা পছন্দ নয়। অনু এবার আর চুপ থাকেনি। নিজেই না করে দিয়েছে…এখানে সে বিয়ে করবে না। আসলে এরকম অনু-রা কখনোই এটা বলে খুশি হয় না যে, আমার বর অমুক জায়গায় চাকরি করে। ওরা এটাও বলতে চায় যে সে নিজে আজ কোন জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে।
স্কুলের বেল পড়তে আর দশ মিনিট বাকি। অনুর স্বামী বাইকে করে এসে নামিয়ে দিল অনুকে স্কুলের সামনে। আজ শিক্ষিকা হিসেবে অনু প্রথম পা রাখলো স্কুলে। সেদিনের সম্বন্ধটা না করে দিয়েছে বলে আজ আরও একবার খুব খুশি হল অনু। সবাই সমান নয়। অনুর আজ যার সাথে বিয়ে হয়েছে সে একদম অনুর মনের মতই…সেও নারীদের অধিক সুবিধাদানে নয়, বরং সমান সুবিধাদানে বিশ্বাসী।